শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

এত পানির মাঝেও একটু খাবার পানির জন্য হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৭
ফাইল ছবি

ডুবে গেছে চারপাশ। থই থই পানিতে সব মিলেমিশে একাকার। কোথাও নেই এতটুকু শুকনো ভূমি। যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। থই থই পানিতে কেবল মাথা উঁচিয়ে আছে বাগান বাড়ির লম্বা লম্বা গাছ।

গ্রামীণ সড়কের মুখে উঁচু কালভার্টটা নিজের কিছুটা অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। চারপাশে পানির মাঝে কালভার্টটাকে মনে হচ্ছে ভাসমান ভেলা। বন্যাকবলিত লক্ষ্মীপুরের গ্রামগুলোর চিত্র এখন এমন।

চারিদিকে কেবল পানি আর পানি। হাতের নাগালে এতো পানি হলে কি হবে, এসব পানি বিশুদ্ধ নয়- খাওয়ার অযোগ্য। থই থই পানির মাঝে বাস করেও সুপেয় পানির সংকটে লক্ষ্মীপুরের মানুষ এখন দিশেহারা।

দৈনন্দিন একটি পরিবারে পানযোগ্য পানির যে পরিমাণ চাহিদা, অনেক পরিবারের পক্ষেই তা পুরোপুরি মেটানো মোটেই সম্ভব হচ্ছে না।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ির পাশাপাশি তলিয়ে গেছে নলকূপ। তাই নিরাপদ পানি মিলছে না সে নলকূপ দিয়ে। ফলে দুর্গত এলাকায় এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে। তবে যে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়, সেখানে কিছুটা বোতলজাত পানির দেখা পান বন্যার্তরা। যদিও তা একেবারে নগণ্য। এজন্য পানিবন্ধি লোকজনও খুব হিসেব করে পানি পান করছেন।

গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুরের বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে নিরাপদ পানির চরম সংকট লক্ষ্য করা গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ টিউবওয়েল পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও যদিও বা দু-একটি টিউবওয়েল পানির উপরে থাকে, সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দুর্গত এলাকার লোকজন। তবে অথৈ পানির মধ্যেও দূর-দূরান্ত থেকে পানি বহন করে আনাও আরেক যুদ্ধ।

দুর্গত এলাকায় বাসিন্দারা জানান, তারা এখন পানযোগ্য পানি খুবই কম পাচ্ছেন। তাই কম করে পানি পান করছেন। অর্থকষ্টে থাকা কেউ কেউ দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনতে অর্থ ব্যয় করছেন। কেউ আবার বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছেন।

জেলার সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম জামিরতলী গ্রামের রঙি বাড়ির বাসিন্দা কৃষক মো. আমিন বলেন, খাবার পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেটা পাই, কম কম করে পান করি। ত্রাণ হিসেবে বোতলের পানি যথেষ্ট নয়। পরিবারের ৯ জন সদস্য। যতটুকু পাই, তা দিয়ে হয় না। বাড়িতে থাকা চাপাকলের পানিতে আর্সেনিক। আগে যে কলের পানি পান করতাম, সেটা ডুবে আছে। তাই পানি সংগ্রহ নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।

তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের থেকে পাওয়া ত্রাণের প্যাকেটের সঙ্গে বোতলজাত পানিও দেয়। সেটা একেবারে নগণ্য।

একই এলাকার বৃদ্ধ মনজু মিয়া বলেন, বাড়ির অদূরে একটি মাদরাসার পাশে টিউবওয়েল আছে। সেখান থেকে বালতি করে পানি নিয়ে আসি। খুব কষ্ট হয়। আবার ত্রাণ হিসেবে এক বোতল পেলে তা দিয়ে কোনো মতে চালিয়ে নিই। এ পানি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

আবু তাহের নামে একজন বলেন, ত্রাণ হিসেবে দুই এক বোতল পাই। বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি। টিউবওয়েল সব পানির নিচে।

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, এলাকার বেশিরভাগ চাপাকল পানির নীচে। আমাদের পুরোনো বাড়িতে শুধুমাত্র একটি কল এখনো পুরোপুরি ডুবেনি। দূর-দূরান্তের লোকজন এবং পাশের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা ওই চাপাকল থেকে পানি সংগ্রহ করে। পানি বহন করতে কষ্ট হয় তাদের।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাই। ওইসব এলাকার লোকজনের মাঝে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখি। অনেকে আগে তাদের পানির চাহিদা জানায়। তাই বন্যার্ত এলাকার প্রতি পরিবারের জন্য আমরা ৫ লিটারের বড় বোতলে করে পানি সরবরাহ করি।

মন্তব্য করুন