শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশে যেসব কারণে এত বেশি বন্যা?

ফিচার ডেস্ক
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:৩৮
ছবি- সংগৃহীত

নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় প্রতি বছর বাংলাদেশের একটি বড় অংশ প্লাবিত হয়। এছাড়াও ঋতুচক্রের পালাবদলে ৬টি ঋতু—গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে ভিন্নতা দিয়েছে, যা বিশ্বে বিরল।

বাংলাদেশে বছরের বেশির ভাগ সময়ই যেমন প্রচণ্ড গরম থাকে, তেমনি বেশ কয়েক মাস প্রবল বৃষ্টিপাতও হয়। বর্ষা মৌসুমে কেন বৃষ্টিপাতের হার সবচেয়ে বেশি থাকে?

আমাদের দেশে ঋতুভেদে বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। শীতকালে বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় এবং বর্ষাকালে বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সূর্য দক্ষিণ দিকে সরে যেতে থাকে এবং নভেম্বর থেকে হিমালয়ের শুষ্ক ও ঠান্ডা বাতাস দক্ষিণের দিকে প্রবাহিত হয়, যাকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুও বলা হয়ে থাকে। 

তেমনি বর্ষার ঋতুতে অর্থাৎ মে মাসের শেষ দিকে মৌসুমি বায়ু দিক পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তরের দিকে প্রবাহিত হয়। ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রচুর জ্বলীয়বাষ্প নিয়ে হিমালয় পর্বতমালার দিকে প্রবাহিত হয়। এই দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহের কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এ দেশে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের ৭০-৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া বা জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশে নিয়মিত বন্যা হয়। এ দেশের ওপর দিয়ে ৪০৫টি নদী বয়ে গেছে এবং প্রধান প্রধান নদীর উত্পত্তির স্থল দেশের বাইরে। যখন একটি নদী একাধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার (Transboundary river) নদী বলে। বাংলাদেশের নদীর অববাহিকাগুলো হলো গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা। এগুলো বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল ও চীনে বিস্তৃত।

এই অববাহিকার ৯৩ শতাংশ এলাকার অবস্থান বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোতে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ি এলাকা, মধুপুর গড়, লালমাই পাহাড় ও বরেন্দ্র ভূমি ছাড়া অধিকাংশ জায়গায়ই প্লাবন ভূমি (Flood plain) এবং অর্ধেকের বেশি অংশের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ ধেকে ৮ মিটার উচ্চতায়।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, পরে এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিচু এলাকাগুলো যেমন: হাওর, বিল, ঝিলগুলো বৃষ্টির পানি দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং বর্ষা ঋতুতে স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে থাকে।

নদীর পানি যখন নদীর তীর বা বাঁধ উপচে প্লাবন ভূমিতে ঢুকে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে, তখন সেই অবস্থাকে বন্যা বলে। পানি যে উচ্চতায় উঠলে এলাকার ফসলি জমির বা ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট, বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই উচ্চতাকে বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়।

বাংলাদেশে ৪ ধরনের বন্যা হয়। বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি ও নদীর পানি প্রবাহের মাত্রার ওপর নির্ভর করে বন্যার ধরন। এর একটি হলো মৌসুমি বন্যা (Monsoon flood)। সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো ও তাদের শাখা বা উপনদীগুলোতে ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি পায়। তখন নদীর তীর বা পার্শ্ববর্তী বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে বন্যা দেখা যায় সেই অঞ্চলে। এ ছাড়া আছে আকস্মিক বন্যা (Flash flood)। দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি নদীগুলোতে আকস্মিক বন্যা হয়। এই বন্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত হ্রাস পায়। 

পাহাড়ি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হয়। ফলে এ ধরনের বন্যা ফসল ও মানুষের বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করে। অনেক সময় আকস্মিক বন্যায় মানুষের জীবনহানিও ঘটে থাকে। আর আছে বৃষ্টিপাতজনিত বন্যা (Rainfed Flood)। তীব্র মাত্রায় দীর্ঘ স্থায়ী বৃষ্টিপাত এবং পানিনিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের বন্যা হয়ে থাকে। ইদানীং শহর এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতজনিত বন্যা বেশি হয়। এ ছাড়া আছে উপকূলীয় বন্যা (Coastal Flood)। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল ও মোহনায় জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় বন্যা হয়।

বাংলাদেশে বন্যার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে দেশের ৩টি প্রধান নদী অববাহিকা। জুন মাস থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং জুলাইয়ের প্রথমার্ধে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। 

তখন এই অববাহিকার জেলা কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জের নিম্ন এলাকায় বন্যা হয়। আবার জুলাই মাসের শেষে এবং আগস্টের প্রথমার্ধেও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আরেকবার বাড়ে এবং পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, গঙ্গা অববাহিকায় জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে থেকে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং আগস্ট মাসে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এপ্রিল-মে মাস থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেঘনা অববাহিকা এলাকায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রাক্-মৌসুমে বন্যার সৃষ্টি হয়। এই বন্যাকে আকস্মিক বন্যা আবার আগাম বন্যাও বলা হয়ে থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় নদী-সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, কংশ, যদুকাটা ইত্যাদিতে একাধিক বার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। মেঘনা অববাহিকার বন্যার কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে বন্যা হয়।

এই ৩ অববাহিকার প্রধান নদীর পানি একই সঙ্গে বাড়তে শুরু করে যুগপত্ভাবে সর্বোচ্চ প্রবাহে প্রবাহিত হলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক আকার ধারণ করে, যেমনটি ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ এবং ১৯৯৮ সালে প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।

মন্তব্য করুন