শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২

সন্তানের শেষ ইচ্ছেটাও পূরণ হলো না, শহীদ রাজুর মা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮
ছবি-সংগৃহীত

মায়ের স্বপ্ন ছিল, তার ছেলে রাজু একদিন তাকে সুস্থ করবে, বাবার কষ্ট লাঘব করতে তাকে পরিশ্রমের কাজ করতে দেবেন না। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই পুলিশের গুলিতে ঝরে গেলো মাগুরার তরুণ রাজু আহমেদের (২৬) জীবন।

১৯ জুলাই ২০২৪ ঢাকা মহম্মদপুর বাঁশখালী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রথমে তার পায়ে গুলি করে, পরে বন্দুক ঠেকিয়ে পেটে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান রাজু। তার পরিবার বলছে, রাজু কোনো সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না, তবুও তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মাগুরা সদর উপজেলার আজমপুর গ্রামের মো. আবু কালাম মোল্লার ছেলে রাজু আহমেদ। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই বিদেশ ফেরত, আর ছোট বোন সিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে গ্রামেই।

রাজু মাগুরা আদর্শ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সংসারের অভাব ঘোচাতে রাজু তিন মাস আগে পড়াশোনার পাশাপাশি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী এলাকায় জননী কুরিয়ার সার্ভিসে মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন।

রাজুর স্বপ্ন ছিল, একদিন তিনি বাবাকে বেশি পরিশ্রমের কাজ করতে দেবেন না, মায়ের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নও দেখতেন তিনি। পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল, টাকা জমানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নিতে পারল না।

রাজুর মা নাসিমা খাতুন এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তার হাঁটুর নিচে ৭টি প্লেট বসানো আছে। প্রতিদিনই ব্যথায় কষ্ট পান তিনি। রাজু সবসময় বলতেন, 'আম্মা, তোমার চিকিৎসা  করাব। আব্বাকে আর পরের জমিতে কাজ করতে দেব না।'

মৃত্যুর আগের দিন রাজু তার ছোট বোন সিমা খাতুনকে ফোন করে বলেন, 'আব্বাকে পাঁচ হাজার টাকা  দে,  বেতন পেলে দিয়ে দেব। আর বেতন পেলে  আব্বাকে ৪০ দিনের চিল্লায় পাঠাব, কাজ করতে দেব না।'

কিন্তু সেই বেতন আর হাতে পেলেন না রাজু। পরদিন রাজুর রক্তাক্ত নিথর দেহ বাড়ির দরজায় পৌঁছল। পরে মাগুরা সদর থানার ওসি ফোর্সসহ এসে হুমকি দিয়ে যায় মামলা না করার জন্য। এবং বলেন, মামলা করলেও কোনো লাভ হবে না।

রাজুর পরিবার জানায়, তিনি সবসময় বলতেন, 'আমার মা ভালো হবে, আমার আব্বা কষ্ট করবে না।' কিন্তু এখন রাজুর মা শোকে পাথর। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'আমার ছেলেটা শুধু চাইত আমাদের ভালো রাখতে। ওর শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হলো না।'

রাজুর বাবা মো. আবু কালাম মোল্লা ছেলের ছবি হাতে নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলেন, 'আমার ছেলে সবসময় বলত, আব্বা তুমি কাজ করবা না। আজ ও নেই, আমি কেমনে থাকব?'

মন্তব্য করুন