শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১

শহীদ সন্তানের জন্য বাবা-মাকে কাঁদতে দেয়নি আওয়ামী লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:১০

শহীদ নাদিমুল হাসান এলেমের মা, ৪৮ বছর বয়সী ইসমাত আরা বেগম এখনও প্রতিদিন ছেলের হাতেই ওষুধ খাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। হার্টের সমস্যায় ভোগা সন্তানহারা ইসমাত আরা এখনও মনে মনে ভাবেন— তার আদরের ছেলে ফিরে আসবে; তাকে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের কথা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এক প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে ঘর থেকে তড়িঘড়ি বের হয়েছিল এলেম।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে আয়োজিত ওই সমাবেশের মূল দাবি ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারী সরকারের পতন। প্রধান সড়কজুড়ে ছিল প্রতিবাদী স্লোগান আর পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি। 'একটি গুলি এসে লাগে এলেমের চোখে, সঙ্গে সঙ্গেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন এলেমের বাবা, ৫০ বছর বয়সী শাহ আলম।

তিন ভাইবোনের মধ্যে এলেম ছিল সবার বড়। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ ছিল তার প্রবল। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেই সংসারের হাল ধরতে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয় সে। তার সেই সামান্য বেতনের টাকাতেই চলত পরিবারের খরচ। মায়ের ওষুধও কিনে দিত এলেম।

‘পরিবারের প্রতি ওর দায়িত্ববোধ ছিল অসম্ভব রকমের... দেশের ভালো-মন্দ নিয়েও ভাবত সবসময়,’ বললেন শাহ আলম। ছেলেকে যখন এসব নিয়ে বেশি ভাবতে নিষেধ করতেন, তখন এলেম বলত, ‘সবাই যদি চুপ করে থাকে, তাহলে দেশটা এগোবে কীভাবে? কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে।’

এই বিশ্বাস থেকেই এলেম আর চুপ করে থাকতে পারেনি। ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়ন আর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেদিন পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সমাবেশে যোগ দেয় সে। 

‘ওইদিন ছিল শুক্রবার,’ স্মৃতিচারণ করলেন শাহ আলম। ‘এলেমের খালা খিচুড়ি রান্না করেছিল, বলেছিল দুপুরে খেয়ে যেতে।’  ‘কিন্তু এলেম একটু খেয়েই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল,’ যোগ করলেন তিনি।

সেদিন সন্ধ্যায় শাহ আলমের মোবাইলে ফোন আসে—এলেম গুলিবিদ্ধ, তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবার হাসপাতালে পৌঁছে দেখে, এলেম আর নেই।'

গুলির আঘাতে ছেলেকে চিনতেই কষ্ট হচ্ছিল,' বললেন শাহ আলম।

‘সেদিন এলেম সাদা শার্ট পরেছিল, কিন্তু গায়ে ছিল শুধু রক্ত আর রক্ত—শার্টটা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল,' তিনি আরও বলেন। হাসপাতাল থেকে ছেলের মরদেহ নিতে গেলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাগজ আনতে বলে। ‘সুত্রাপুর, কোতোয়ালি, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আর গেন্ডারিয়া থানায় ঘুরেছি, কিন্তু পুলিশ আমাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে,’ জানান শাহ আলম।

অবশেষে অনেক কষ্টে কালীগঞ্জ তেলঘাটে নিজেদের বাড়িতে ছেলের মরদেহ আনা হয়। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত দাফন সম্পন্ন করতে বলে। এমনকি শুভাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়, কেউ যেন কাঁদতে না পারে।

সেদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যরা বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন কেউ প্রকাশ্যে শোক প্রকাশ করতে না পারে। ভয় দেখিয়ে চুপ করে রাখা হয় পরিবারকে। ‘আমার স্ত্রী ওই দিন থেকেই অসুস্থ,’ বলেন শাহ আলম। তিনি জানান, এলেমের মা একজন হৃদরোগী। তার ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পরিবারটিকে ২ লাখ টাকা এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

শাহ আলম কালীগঞ্জ তেলঘাট থেকে বয়েজ ক্লাব পর্যন্ত সড়কটি যেন নাদিমুল হাসান এলেমের নামে নামকরণ করার দাবি জানান।

মন্তব্য করুন