শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১

সোনার হরিণের খোঁজে সময় শেষ! স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য ফিরলো জাহিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৩
ছবি-সংগৃহীত

ছয় বছর আগে স্নাতক পাস করেন লালমনিরহাটের জাহিদ হোসেন বসুনিয়া। তারপর চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছোটাছুটি করেন কয়েক বছর। তবে দীর্ঘ চেষ্টাতেও কোনো কিনারা করতে না পেরে নিজেই কিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন এই যুবক। 

এরপর শুরু করেন স্ট্রবেরি চাষ, আর তাতেই মেলে সাফল্যের দেখা। অল্পদিনের মধ্যেই বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন জাহিদ বসুনিয়া।

লালমনিরহাট জেলার মহেন্দ্র নগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনোরম গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ। ইতিহাসে স্নাতক পাস করে চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ২০১৯ সালে পুরোপুরিভাবে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ শুরু করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। প্রথম মৌসুমেই তিন বিঘা জমিতে ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপন করেন তিনি।

জাহিদ জানান, ২০২৩ সালে বগুড়া জেলা সদর থেকে টিস্যু কালচারের স্ট্রবেরি চারা নিয়ে এসে ডিসেম্বর মাসে জমিতে সেগুলো রোপণ করেন তিনি। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার জমিতে প্রায় ১০ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম দিকে এর ফল সংগ্রহ শুরু হয়। এরইমধ্যে এই গাছগুলো থেকে গত দুদিনে ৭০ কেজির মতো স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাইকারিতে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।

জাহিদের ভাষ্যে, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমানিরহাট জেলা সদর এলাকার লোকজন তার স্ট্রবেরি কিনে নিচ্ছেন। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এগুলো চাষ করেছেন তিনি। তাই তার স্ট্রবেরি নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে আগ্রহও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, ‘আগামী এক মাস গাছগুলো থেকে নিয়মিত ফল পাওয়া যাবে। এরপর যদি গাছের বাড়তি যত্ন এবং উপরে শেড তৈরি করে দেওয়া হয়, তাহলে আরও ২ মাস পর্যন্ত ফল তোলা সম্ভব।’

বিক্রয় পদ্ধতি

স্ট্রবেরি চাষের পর তা বিক্রির লক্ষ্যে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন বলে জানান জাহিদ।

শুরুতে তিনি খেতের স্বাস্থ্যবান স্ট্রবেরির কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। অনলাইন প্লাটফর্মে এভাবে প্রচারের ফলে স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘ফেসবুকে আমার জমির স্ট্রবেরিগুলোর সুন্দর সুন্দর ছবি দেখেই অনেকে এগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ যোগাযোগও করেন। আর এভাবেই ফল তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা হয়ে যায়।’

তবে বর্তমান অবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না এই উদ্যোক্তা। তার আশা লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারবেন তিনি।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহ আলম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাহিদ বসুনিয়া একজন সফল কৃষক। চাকরি না পেয়ে নিজে স্বাবলম্বী হতে তার সামান্য জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। এতেই সাফল্য পেয়ে যান তিনি। তার এই সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক এই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

শুধু জাহিদ নয়, জেলার অন্য স্ট্রবেরি চাষীদেরও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে এই ফল চাষে সফলতা পেতে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন