বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ফুলকপি বিক্রি ২ টাকা, উৎপাদন খরচ ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫৩
ছবি-সংগৃহীত

মানিকগঞ্জে লোকসানের মুখে পড়েছেন এবার ফুলকপি চাষীরা। প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে তাদের এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৩ টাকায়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। যদি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতো, তবে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন বলে জানান তারা।

ফুলকপি চাষিরা জানান, গত বছরগুলোতে ফুলকপি চাষে লাভবান হওয়ায় এবছর তারা ব্যাপক আবাদ করেছেন। শীতের শুরুতে আগাম ফুলকপি বিক্রি করে বেশ ভালো লাভও করেছিলেন। প্রতি পিস আগাম ফুলকপি বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে কপি উৎপাদনের ভরা মৌসুম, যেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে কপির দাম কমে গেছে। পাইকাররা অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে আগের মতো দাম দিয়ে কপি কিনছেন না।

বর্তমানে, ফুলকপির দাম মাত্র ২ থেকে ৩ টাকায় নেমে এসেছে, অথচ প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষকরা ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।

তারা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১২ হাজার টাকার চারা, ৩ হাজার টাকা হালচাষ, ১ হাজার ২০০ টাকা দিনমজুর, সার ও কীটনাশকের জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা, আর জমির মালিককে বছরে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মোট খরচের তুলনায়, ফুলকপি বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে।

সাটুরিয়া উপজেলার আইরমারা গ্রামের কৃষক বশির আহমেদ জানান, তিনি গত বছর ফুলকপি চাষে ভালো লাভ করেছিলেন, তাই এবছর ১৮ বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমির আগাম কপি বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় করেছেন, তবে বাকি ৮ বিঘা জমির কপি এখন খেতেই নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করতে পারছেন না, এবং কিছু কপি তিনি গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

অন্যদিকে সদর উপজেলার ঢাকুলি গ্রামের আবদুর রশিদ জানান, তিনি ৫০ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। বর্তমানে তাকে প্রতি পিস কপি ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, অথচ এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি জানান, এখন তিনি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন।

মেঘশিমুল গ্রামের নকিম উদ্দিন বেপারি বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমির কপি বিক্রির উপযোগী হলেও সেগুলো বিক্রি করতে পারছি না। কামলা খরচ ও ভ্যান ভাড়া দিয়ে আড়ত পর্যন্ত নেওয়ার খরচেও কপি বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

এছাড়া অনেক বেপারি খেতের কপি আগাম কিনে রেখেছিলেন। তারা এখন ক্ষতির মুখে। ইদ্রিস আলী নামে এক বেপারি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আগাম ফুলকপি কিনে মানিকগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ করেন।

তিনি জানান, কিছুদিন আগে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে ৭৮ হাজার ২০০ পিস কপি কিনেছিলেন, কিন্তু এখন তা ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে তিনি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বাবুল বেপারি জানান, তিনি সাটুরিয়া উপজেলায় প্রায় ১০০ একর জমির কপি আগাম কিনে নিয়েছিলেন, প্রতি পিস কপির দাম ১৫ টাকা ধরেই কিনেছিলেন। এখন সেই কপি বিক্রি করতে পারছেন না এবং তার প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এবারের অস্বাভাবিক শীত এবং বৃষ্টির কারণে সময়মতো কপি চাষ শুরু করতে পারেননি কৃষকরা। ফলে সারা দেশে একসঙ্গে কপি চাষ হওয়ায়, উৎপাদন বেড়ে গেছে এবং চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে দাম কমে গেছে।’

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবিআহ নূর বলেন, ‘ফুলকপির উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা সমস্যার মুখে পড়েছেন। আমরা সবসময় তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি, এক সঙ্গে একটি ফসলের চাষ না করে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে। কিন্তু, প্রথমে দাম বেশি পাওয়ায় সবাই একসঙ্গে ফুলকপি চাষ করেছেন। আগাম, মধ্যম ও নামী জাতের ফুলকপি চাষ করলে এমন সমস্যা এড়ানো যেত বলে মনে কনে তিনি।’

মন্তব্য করুন