রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অতিবৃষ্টির কারণে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচন রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে শীতকালীন আগাম ফুলকপির ক্ষেত। যার ফলে আক্রান্ত গাছ থেকে ফুলকপি নষ্ট হতে শুরু করেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা।
অতিবৃষ্টি, ভালো বীজের সংকট ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের অভাবে প্রতি বছর আগাম শীতকালীন সবজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা। এমন ক্ষতি অব্যাহত থাকলে কৃষকেরা ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবেন বলে জানান তারা। গত বছর ফুল না আসায় এবছর ভালো ফলনের আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু এবারো প্রায় শতাধিক কৃষকের আগাম ফুলকপির ক্ষেতে কার্ডপচা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় ১৬ হাজার ৩৭২ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়। যার মধ্যে ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আগাম ফুলকপি।
সরেজমিন উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নটাপাড়া, গুপ্তলক্ষণদিয়া, হাতিমোহন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে আগাম শীতকালীন সবজি পরিচর্যা করছেন কৃষকেরা। মাঠের পর মাঠ ফুলকপির চাষ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জমির ফুলকপির ফুলে পচন ধরেছে। ফুলকপির ফুলে প্রথমে বাদামী রংয়ের গোলাকৃতি দাগ দেখা যাচ্ছে। অনেক ফুলে বড় আকারে দাগ তৈরি হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ফুলগুলোতে পচন ধরেছে। অনেক ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন কৃষকের রোপণকৃত সম্পূর্ণ জমির ফুলকপি পচন রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে সেগুলো তুলে ফেলছেন কৃষকেরা। এছাড়া এই ইউনিয়নের কয়েকশ কৃষকের জমির কপিও পচন রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জামালপুর ইউনিয়নের নটাপাড়া গ্রামের কৃষক বিজন বৈরাগী বলেন, গত বছর বীজের সমস্যার কারণে আমার ক্ষেতের ফুলকপি ভালো হয়নি। আমি তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এবছর আমি আবার ৬০ শতাংশ জমিতে আগাম ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমার জমির সব ফুলকপি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ হয়েছে। এ বছর আমি প্রায় ২ লাখ টাকার কপি বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু পচন রোগে আমার সব ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের কৃষক শ্যামল বৈরাগী বলেন, ফুলকপি শুধু আমাদের এই মাঠেই হয়। এবার পচন রোগে বেশিরভাগ জমি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে কপির ফুলে পচন ধরে। পচনের এক সপ্তাহের মধ্যে ফুল আর গাছ পচে মাটিতে মিশে যায়। কোনো ওধুষ দিয়ে রোগ ঠিক করা যায় না। আমরা স্থানীয় দোকান থেকে দোকানির পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করি, কিন্তু কাজ হয় না।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর বীজের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমি চেষ্টা করে বীজ কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ এনে দিয়েছিলাম। এ বছর বেশ কিছু জমির ফুলকপিতে পচন রোগ হয়েছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বালিয়াকান্দির বেশিরভাগ কৃষক একই জমিতে বারবার এক ফসল চাষ করেন। জামালপুরের ওই অঞ্চলে আষাঢ়-মাঘ মাস পর্যন্ত একই জমিতে তিনবার ফুলকপির আবাদ করেন। এই কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকেরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন, যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকদের চাষাবাদ করার অনুরোধ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন