দেশের অন্যতম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল চাঁদপুর। এখানকার জলবায়ু, নদীর জোয়ার- ভাটার পানি প্রবাহে জমিতে পলি পড়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। ফলে ব্যাপক বোরোর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সবুজ মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্য কৃষকদের মনক উদ্দেলিত করছে।
চাঁদপুরে উপজেলা ভিত্তিক বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর,ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু’টোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০৩-২৪ অর্থবছরে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৭২ হাজার ৭শ ৪৭ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।
এখন বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষক।জমি থেকে ধান কাটা,মাড়াই,ধান শুকানোসহ সব কাজেই কৃষক ও গৃহস্থ পরিবারের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের কৃষক দুলু পাটওয়ারী (৫৫) জানান, ১২ কড়া জমিতে এবারও বোরো আবাদ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। কড়া প্রতি তিন মণ করে ধান উৎপাদন হয় তার।সেই ধান বাজারে বিক্রি করেন ৯২০ টাকা মণ দরে।
ওই কৃষক বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ধানের দাম কম পাচ্ছেন। চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ৪ শ ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭ শ ৪৭ মে.টন চাল।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, উপজেলা ভিত্তিতে চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ৫শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৫শ ২৫ মে.টন্। হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৬শ ১৬ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ৬শ ২৩ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৮শ ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৬শ ৩ মে.টন। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯শ ৮৪ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৫শ ৯০ মে.টন্।
মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৬শ ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬শ ৭৪ মে.টন। কচুয়ায় আবাদ ১৩ হাজার ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার ৩শ ৫৩ মে.টন্। ফরিদগঞ্জে আবাদ ১০ হাজার ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৪শ ৩৫ মে.টন্ । হাইমচরে আবাদ ৬শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৬ মে.টন্। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামার বাড়ি চাঁদপুরের বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো.খায়রুল বাসার জানান, ব্রি-ধানের সব ধানের বীজ মধ্যে ব্রি আর ১৬, ২৮, ২৯, ৫৫, ৮৪, ৫৮, ৯২, ৯৬, ৮৯ ও বাংলা জিরা সরকারিভাবে স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানান। ধান,গম,আলু,পাট,আখ,ভূূট্টা,পেঁয়াজ,রসুন,তিল,মুগ-মুসারি,মিষ্টি আলু, সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল।
চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগার ও ১ টি বীজভান্ডার রয়েছে। যাতে ৬০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ। প্রসঙ্গত, দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ,সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, সেচ সুবিধা,সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে। প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩ শ ২২ মে.টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী । ২৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি।
ধান, গম, আলু, সরিষা পাট, সয়াবিন, আখ,অভিন্ন শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০, ১৬, ১৭, ১৯ এর আওতাভুক্ত। জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প জেলার ৪ উপজেলা সদর,ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর,হাইমচরে ২৩ হাজার ৩ শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে ।
মন্তব্য করুন