বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩২

সমাজের অবস্থা স্বস্তিদায়ক নয়: স্বস্তিকা

বিনোদন ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫১

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে প্রথমেই তার সাজ নিয়ে আগ্রহ থাকে। নাকে নাকছাবি পায়ে স্নিকার বা শাড়ির সঙ্গে ওভারসাইজ টিশার্ট পরে তিনি ভিন্ন এক সাজের ধারা তৈরি করে ফেলেছেন। 

এবার দেখা জাম রঙের গাউনে। তাঁর চশমা নজর কেড়েছে পোশাকের আগে। ইডলি খেতে খেতে শুরু হল হালফিলের কথা।

প্রশ্ন: স্বস্তিকা ডায়েট করছেন?

স্বস্তিকা: না তো! কেন রোগা লাগছে নাকি?

প্রশ্ন: নতুন বছরে রোগা দেখাচ্ছে...

স্বস্তিকা: না না। কায়দার জামা পরেছি। তাই রোগা দেখাচ্ছে।

প্রশ্ন: ‘নিখোঁজ ২’ ওয়েব সিরিজ় নিয়ে স্বস্তিকা কী ভাবেন?

স্বস্তিকা: এ বারের ‘নিখোঁজ ২’-এ আগের ঘটনার সমাধান খুঁজে পাবে দর্শক। প্রচুর মানুষ ইতিমধ্যেই ‘নিখোঁজ ২’ দেখে সরাসরি আমাকে সমাজমাধ্যমে লিখছেন। আমি লেখাগুলো ভাগ করে নিচ্ছি।

প্রশ্ন: বাংলায় মহিলাদের প্রতিনিয়তই পুলিশের চরিত্র করতে দেখা যায়, এমনও নয়।

স্বস্তিকা: সেই কারণেই প্রথম থেকেই উত্তেজনা ছিল চরিত্রটা নিয়ে। এখানে পুলিশ শুধুই যে অপরাধ দমন করছে এমন নয়। এই চরিত্রটার মধ্যে পুলিশ ও মা পাশাপাশি চলছে। 

মায়ের জেদ আর পুলিশের দক্ষতা দুটোই এই চরিত্র দাবি করে। খানিকটা সত্য আর অনুভূতির রেষারেষি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এই চরিত্রে। পরিচালককে মাঝেমাঝেই বলতাম, মা কোথাও বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো! আজও কোথাও কোথাও তো ধরে নেওয়া হয় মহিলা পুলিশ ততটাও দক্ষ নয় যতটা পুরুষ।

প্রশ্ন: মানে বর্তমান সময়েও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দেখা যায়…

স্বস্তিকা: অবশ্যই। ২০২৫ সালেও কর্মক্ষেত্রে আমাদের মহিলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে হয়। কোনও পুরুষের যদি পদোন্নতি হয়, সেক্ষেত্রে বলা হয় পরিশ্রমের জোরে যোগ্যতা দিয়ে পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু একজন মহিলার ক্ষেত্রে বলা হয়, অনুচিত পন্থায় রফা করেছেন বা তার শরীরের বিনিময়, সৌন্দর্যের নিরিখে পদোন্নতি হয়েছে। সেটা তো রয়েছেই। মহিলাদের দক্ষতা, কাজের প্রতি অনুরাগ উপেক্ষা করা হয় সর্বতোভাবে।

প্রশ্ন: আগের তুলনায় একটুও কি পরিস্থিতির বদল ঘটেছে?

স্বস্তিকা: আমাদের সমাজ ও দেশের অবস্থা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। আরজি করের ঘটনার পরে মনে হয়েছিল কত কিছু বদলাবে! সম্প্রতি মেট্রো স্টেশনে চুমুর ঘটনাটা নিয়েও তো কত কাণ্ড! মানসিকতার যে কোনও রদবদলই হয়নি তা স্পষ্ট। এই পুরো ঘটনায় দোষী এক জনই, যিনি চুমু খাওয়ার ভিডিয়ো করেছিলেন আর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে তো কোনও কথাই হল না। তার অন্যায়টা নিয়ে কেউ কথা বলল না, উল্টে ভালবেসে কেউ কিছু করলে সেটা নিয়ে হইচই করা হয়। মেয়েটি চুমু খেয়ে যত অপরাধ করল!

প্রশ্ন: আরজি কর প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, সুদীপ্তা, স্বস্তিকারা সরে গেলেন…

স্বস্তিকা: একটা আন্দোলন হয়েছিল, সেটার তো একটা সমাপতন হবেই। চিকিৎসকেরাও কি এখন চিকিৎসা না করে ধর্মতলায় বসে রয়েছেন? আন্দোলন যদি এক বছর ধরে চলত, তা হলে আমরাও সেই মতো সময় বার করে যোগ দিতাম। সেটা তো হয়নি।

প্রশ্ন: আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য কোনও রাজনৈতিক মহল থেকে চাপ এসেছে?

স্বস্তিকা: একেবারেই না। কোনও বার্তাই আসেনি আমার কাছে। আন্দোলনটাই তো ঝিমিয়ে পড়েছে। আমাদের কথা বাদ দিন, আন্দোলন তো অনেক বেশি সাধারণ মানুষদের। তাঁরা কি এখনও পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন? তা হলে আমরা কী করব? নিজেরাই কি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব প্রত্যেক দিন?

প্রশ্ন: সিবিআই চার্জশিট দিতে পারল না, কোনও মন্তব্য করবেন না?

স্বস্তিকা: কী আর বলব? আমি তো বুঝতেই পারলাম না পুরো বিষয়টা। জামিনও পেয়ে গেল। খুব ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন আগে অনির্বাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বলেছিল, “এ সব করে কিছুই হবে না।” তখন আমরা সবাই ওর কথা শুনে রেগে গিয়েছিলাম। এখন তো দেখছি ও ঠিকই বলেছিল।

প্রশ্ন: এখন তো বয়কটের ডাক চলছে ইন্ডাস্ট্রিতে?

স্বস্তিকা: এগুলো বাজে কথা। সমাজমাধ্যমে চলে এ সব। আমি তো দিব্য শুটিং করছি। অবশ্য পুজোর সময় কাজের ক্ষতি হয়েছিল।

প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমেও ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের লড়াই প্রকাশ্যে চলে আসছে। উইন্ডোজ় আর দেবের ‘ফ্যানক্লাব’-এর বিবাদের জের, জ়িনিয়ার বিকৃত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হল সমাজমাধ্যমে। এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ঘটনার কারণ কী?

স্বস্তিকা: জানি না। আমাকে কোনও কিছুই আর অবাক করে না। সব দিক থেকে আমরা অনেক নীচে নেমে যাচ্ছি। আরজি কর আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর আমাকে নিয়ে যে ধরনের কার্টুন বানানো হয়েছিল, তার থেকে কদর্য কিছু করা যায় বলে তো মনে হয় না।

প্রশ্ন: আপনার ‘ফ্যানক্লাব’ এই ধরনের ঘটনা ঘটালে, কী পদক্ষেপ করতেন?

স্বস্তিকা: আমার ‘ফ্যানক্লাব’ থেকে এই ধরনের কাজকর্ম হত না। আমার অনুরাগীরা ও রকম নয়। যাঁদের ফ্যানক্লাব এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেই শিল্পীদের নিজেদের অনুরাগীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

প্রশ্ন: মনে হচ্ছে না এই ধারার চর্চায় সিনেমাটা গৌণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? একসঙ্গে একাধিক ছবি মুক্তি পেলে এই যে আক্রমণাত্মক নানা কথা...

স্বস্তিকা: আমি এটা অনেক আগেই বলেছি। পরস্পরের পাশে কেউই নেই। সবাই নিজের নিজেরটা বোঝে। নিজেরটা ঠিক হলেই ব্যস! বাকি যা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে হোক। স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা ক্রমশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। তবে এর মাঝেই কাজ করে যেতে হবে। নিজেকে ঠিক রাখতে হবে।

প্রশ্ন: নতুন বছরে কী পরিকল্পনা?

স্বস্তিকা: প্রচুর কাজ করব। মূলত মুম্বইয়ে কাজ করাটাই প্রধান লক্ষ্য। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁদের সঙ্গে এখনও কাজ করিনি, তাঁদের সঙ্গে কাজ করব।

প্রশ্ন: যেমন?

স্বস্তিকা: উইন্ডোজ়। শিবুর সঙ্গে কাজ হয়নি। তা ছাড়া, কাজের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।

প্রশ্ন: সৃজিতের সঙ্গে কাজ করবেন?

স্বস্তিকা: এখনও পর্যন্ত জানি না। ওর সঙ্গে তো হুট করে কাজ হয়ে যায়। এখন কাজের কথা হয়নি।

প্রশ্ন: কাজের ক্ষেত্রে এই বয়সে এসে কী মনে হয় সৌন্দর্য ধরে রাখার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে? অনেকে যেমন বোটক্স করেন..

স্বস্তিকা: শুনুন, অভিনয় শেষ কথা। তবে আমার যদি কখনও ইচ্ছে হয়, আমি বোটক্স করাব। সবাই করাচ্ছে তাই আমাকেও করাতে হবে এমন নয়। যদি কখনও আমার মনে হয়, এই পাতলা ঠোঁট ভাল লাগছে না অথবা, কপালে অত্যধিক ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে, তা হলে করাব। মানুষ এত দিনে জেনে গিয়েছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে ভাল দেখতে। ওটা নতুন কিছু নয়। আমার সাজ, সৌন্দর্য মানুষ দেখে নিয়েছেন এই ২৫ বছরে। তা সে শাড়ি হোক অথবা বিকিনি। যা দেখেননি তা হল নতুন চরিত্রের মাধ্যমে আমার অভিনয়। সেটা আমায় দেখাতে হবে।

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা ও স্বস্তিকার পরবর্তী অভিনেত্রীরা কি একটানা লম্বা সময় ধরে কাজ করতে পারছেন বলে মনে হয়?

স্বস্তিকা: আমি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। তখন বৃদ্ধার চরিত্রকে কেন্দ্র করেই গল্প হতে হবে। ছবিতে দিদার চরিত্রের প্রয়োজন বলেই অভিনয় করব না।

প্রশ্ন: দেব, জিৎ, যিশু, ঋত্বিক, অনির্বাণের ছবি আসছে। কিন্তু তনুশ্রী, শ্রাবন্তী, নুসরত, পায়েলদের খুব কম দেখা যাচ্ছে ছবিতে? অভিনেত্রী বলেই কি?

স্বস্তিকা: না, আমার তা মনে হয় না। মহিলা বলে কাজ পাচ্ছেন না, এমন নয়। তাঁরা কেন কাজ করছেন না, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন।

একটা কথা বলি?

প্রশ্ন: বলুন না...

স্বস্তিকা: যখন কাজ শুরু করেছিলাম শুনতাম, লম্বা সময় পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। বাবা শিখিয়েছিলেন, পরের পাঁচ বছরে কোথায় থাকব সেটা না ভেবে এটা ভাবতে হবে যে, আগামী ২৫ বছরে আমি কোথায় থাকব। কত তাড়াতাড়ি উঠতে পারলাম, সেটা বড় কথা নয়। কতটা সময় সেখানে থাকতে পারলাম, সেটা জরুরি।

মন্তব্য করুন