রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

রেকর্ড গড়েছে ‌‘পুষ্পা’

বিনোদন ডেস্ক
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৮
ছবি-সংগৃহীত

বড় পর্দায় বারংবার ঘোষণা তার, “ম্যায় ঝুকেগা নহি”! বাস্তবেও সেটাই করে দেখাচ্ছেন ‘পুষ্পা’ ওরফে অল্লু অর্জুন। ২ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে মুক্তি পেয়েছে ‘পুষ্পা ২’। অগ্রিম বুকিং থেকেই রেকর্ড গড়েছে ছবিটি। 

হাজার কোটির ক্লাব পেরিয়ে দু’হাজার কোটির ক্লাব লক্ষ্য তার। সারা দেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও তার দাপট অব্যাহত। সদ্য ছবির নায়ক আইনি গেরোয় ফেঁসেছেন। 

তিনি হাজতবন্দি, সারা দেশ তাঁকে নিয়ে বীরপুজোয় মেতেছে। ফলাফল? বড়দিনে চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে— ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। চারটি ছবিই ‘পুষ্পা’র দাপটে কাবু! এই চিন্তাতেই ঘুম ছুটেছে ছবির প্রযোজক, পরিচালকদের।

ঘটনা কিছুটা হলেও সত্যি, প্রমাণ দেবের বক্তব্য। বুধবার প্রযোজক-অভিনেতা সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। লিখছেন, “এখনও ‘খাদান’ ছবির অগ্রিম বুকিং শুরু হয়নি বলে দুঃখিত। ভিন্ন ভাষার ছবির কারণে ছবির শো, অগ্রিম বুকিং সব ব্যাহত।” ছবির পরিচালক সুজিত রিনো দত্ত অবশ্য আশাবাদী। 

তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন, ছবির গুণে শো বাড়বে। যদিও তখনও পর্যন্ত জানা যায়নি কোন ছবি কোন প্রেক্ষাগৃহে ক’টা শো পাচ্ছে।

সারা দিন দফায় দফায় বৈঠক। এ দিন বিকেলের পর বিষয়টির উপরে আলো ফেলেছেন কিছু হলমালিক, পরিবেশক। যেমন, প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের মালিক অরিজিৎ দত্ত। তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, “ভেঙে পড়ার মতো কিছু হয়নি। সব ছবির অগ্রিম বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার প্রেক্ষাগৃহে ‘খাদান’ দু’টি শো পাচ্ছে। একটি পাচ্ছে ‘চালচিত্র’। একটি ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। একটি শো-তে ‘পুষ্পা ২’।” 

প্রেক্ষাগৃহে রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’ তা হলে জায়গা পেল না? প্রশ্ন রাখতেই পাল্টা প্রশ্ন অরিজিতের, “যে ছবি এখনও ব্যবসা দিচ্ছে তাকে কোন যুক্তিতে সরাব? আমাকেও তো ব্যবসা করতে হবে!” প্রায় একই চেহারা নবীনা প্রেক্ষাগৃহেও। সেখানে ‘খাদান’ আর মানসী সিংহের দ্বিতীয় ছবি জায়গা পেয়েছে। বাকি ‘পুষ্পা’র দখলে।

এক দিকে, বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর ডাক। অন্য দিকে, ভিন্ন ভাষার ছবির কাছে ধরাশায়ী বাংলা ছবি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবেশক যদিও এই বক্তব্যের ঘোর বিরোধী। তিনি সাফ জানিয়েছেন, উৎসবের মরসুমে একসঙ্গে এতগুলো ছবি নিয়ে এলে এই সমস্যা হবেই। এই কারণে বলিউড একসঙ্গে দুটোর বেশি ছবিমুক্তি ঘটায় না। তাঁর অনুযোগ, এই বোঝাপড়া টলিউডে থাকলে প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে এই টানাপড়েন হত না।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশকের এই কথা কিন্তু মানতে নারাজ ‘সন্তান’ ছবির পরিচালক রাজ। তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। বলেছেন, “আমরা মুখেই বলি। বাস্তবে কেউ বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিই না। সেটা হলে আজ সব প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবি চলত।” 

তাঁর আফসোস, এই ছবি কেবল বাংলাতেই দেখা যায়। অন্য রাজ্যে সবার আগে সেই রাজ্যের ভাষা প্রাধান্য পায়। তার পর অন্য ভাষা। পশ্চিমবঙ্গ ঠিক তার উল্টো পথে চলে। এই জায়গা থেকে রাজের দাবি, “আমরা যদি শক্ত হাতে হাল ধরি, জোরালো প্রতিবাদ জানাই, তা হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।”

‘পুষ্পা’র কারণে হল পাওয়া নিয়ে সমস্যা দক্ষিণ কলকাতায়। উত্তর কলকাতাতেও কি কমবেশি একই অবস্থা?

হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের মালিক-প্রযোজক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের তিনটি বাংলা ছবিকে জায়গা দিতে পেরেছেন। তালিকায় ‘খাদান’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’, ‘সন্তান’। তাঁর কথায়, “আমরা সব সময় বাংলা ছবির পাশে আছি। সেই জায়গা থেকে এই তিনটি ছবি দেখাচ্ছি। রাতের শোতে ‘পুষ্পা’।” ফিরদৌসুল হাসানের ‘চালচিত্র’ ছবিটি জায়গা পেল না? এই প্রশ্নের জবাবে জয়দীপের বক্তব্য, তাঁরও বিষয়টি খুব খারাপ লেগেছে। প্রেক্ষাগৃহ ভরানোর কারণেই রাতের শো-তে অল্লু অর্জুনকে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

স্টার থিয়েটারের কর্ণধার এই বক্তব্যের পাশাপাশি নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশকের মতোই একসঙ্গে এত ছবিমুক্তি নিয়েও বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর মতে, অনেক কষ্ট করে বাংলা ছবি বানানো হয়। হলমালিকদেরও ইচ্ছে থাকে সেই ছবিগুলোকে ‘প্রাইম টাইম’ দেওয়ার। কিন্তু একসঙ্গে চারটে ছবি এলে ইচ্ছে থাকলেও তখন আর উপায় থাকে না। 

তাঁর অনুযোগ, “নিজেদের মধ্যে লড়াই না করে সারা বছর ধরে ছবিগুলো মুক্তি পেলে এই সমস্যা হয় না। হলমালিকদের উপরেও চাপ তৈরি হয় না। তা হলে প্রত্যেকটি ছবি ভাল শো পাবে। ভাল বাণিজ্যও করবে।” জয়দীপ সমস্ত প্রযোজককেই তাই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রায় একই কথা শিয়ালদহের প্রাচী সিনেমার কর্ণধার বিদিশা বসুরও। তিনি জায়গা দিতে পেরেছেন ‘খাদান’ আর ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’কে। বাকি দুটো শো ‘পুষ্পা ২’-র দখলে। একটি শো কমিয়ে কি আরও একটি বাংলা শো নেওয়া যেত না? হাতে ‘চালচিত্র’ বা ‘সন্তান’ তো ছিলই। 

বিদিশার যুক্তি, “দর্শক অল্লু অর্জুনের ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে। কী করে তাঁদের বঞ্চিত করি। আমাদের ব্যবসা তাঁদের চাওয়ার উপরেই নির্ভর করে।” সেই জায়গা থেকে তাঁরও অভিমত, একসঙ্গে অনেক ছবি মুক্তি পেলে এই সমস্যা হবেই। বিদিশা বাংলা ছবিকে জায়গা দেবেন বলেই ‘মুফাসা’ নেননি। আগামী সপ্তাহে ‘বেবি জন’ আসছে। সেই ছবিও সম্ভবত নেবেন না। বরং ‘পুষ্পা ২’-এর ব্যবসা কমলে ‘সন্তান’কে জায়গা দেবেন।

একাধিক হলমালিক এবং পরিবেশকের কথা অনুযায়ী, ভিন্ন ভাষার ছবির দাপটের থেকেও বড় সমস্যা একগুচ্ছ বাংলা ছবির একসঙ্গে মুক্তি। তাঁদের পরামর্শ, প্রযোজকেরা একসঙ্গে বসে যদি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ছবিমুক্তির সময় ভাগাভাগি করে নেন তা হলে আর কোনও সমস্যা থাকে না। বাংলা ছবিও ভাল বাণিজ্য করতে পারে।

মন্তব্য করুন