সদ্য প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নেয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘পাস শূন্য’ হিসেবে ওঠে এসেছে পাঁচটির নাম। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীরা একজনও পাস করতে পারেননি।
এরমধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন এবং চারজনই ফেল করেন। দুটি প্রতিষ্ঠানই চট্টগ্রাম নগরের। কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি দুই প্রতিষ্ঠানের। বন্ধ হয়ে গেছে ভর্তি কার্যক্রম। এমনকি চলে না শ্রেণি কার্যক্রমও।
জানা গেছে, শিক্ষক সংকটসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠান দুটির ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বোর্ড। যে কারণে নতুন কেউ ভর্তি না হলেও পূর্বে ফেল করা শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষায় এবং আবারো তারা ফেল করছেন।
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে শতভাগ পাস মাত্র ১৩টি কলেজের। আর পাঁচটি কলেজ থেকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর একজনও পাস করতে পারেননি। পাসশূন্য কলেজ পাঁচটির মধ্যে দুটির অবস্থান নগরে, বাকি তিনটি উপজেলায়। নগরের কলেজ দুটি হলো- চট্টগ্রাম জিলা কলেজ ও হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ। উপজেলার তিনটি হলো- হাটহাজারীর রহিমপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাউজানের মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চকরিয়া কর্মাস কলেজ।
তিন কলেজের শতভাগ ফেল-এর বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা বোর্ড। গত বৃহস্পতিবার কলেজ তিনটিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
নগরের দুটি কলেজের মধ্যে হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন একজন। তিনি ফেল করেন। চট্টগ্রাম জিলা কলেজ থেকে অংশ নেন তিনজন। তিনজনই ফেল করেন। কলেজ দুটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাগজে কলমে চট্টগ্রাম জিলা কলেজের অবস্থান নগরের পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ এলাকায়। তবে সেই ঠিকানায় গিয়ে কলেজটির কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি স্থানীয়রাও দিতে পারেননি কোনো তথ্য। আবার কারো কারো মতে- হয়তো আগে থাকলেও বর্তমানে সেখানে নেই কলেজটি।
বাস্তবে অস্তিত্ব না পেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাওয়া গেছে কলেজের নামে একটি পেজ। পেজটি ঘেঁটে সাম্প্রতিক কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। ২০২২ সালের কয়েকটি পোস্ট পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা একটি পোস্ট দেখা যায়। পেজে দেওয়া দুটি নম্বরে কল দিলেও মেলেনি সাড়া।
অপর প্রতিষ্ঠান হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজের অবস্থান নগরের বন্দর থানা এলাকায়। সেটিরও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কলেজটিরও ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কলেজের নামে পাওয়া পেজে দেখা গেছে- সর্বশেষ পোস্টটি ২০২০ সালের ৯ আগস্ট তারিখের। এরপর নতুন করে আর কোনো পোস্ট করা হয়নি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠার পর গত সাত বছরে কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ১০৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেন মাত্র ৬০ জন। শিক্ষক–শিক্ষার্থী সংকটসহ নানা কারণে গত বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে কলেজটির শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
যে কারণে ২০২৩ সালে অনিয়মিত হিসেবে আটজন পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেন। সে বছর চারজন পাস করতে পারলেও বাকি চারজন ফেল করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তাদের মধ্যে তিনজন পরীক্ষায় অংশ নেন এবং সবাই ফেল করেন। ফলে শূন্য পাসের তালিকায় চলে আসে কলেজটি।
অন্যদিকে, ২০১৪ সাল থেকে গত ১০ বছরে হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন ১৪০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেন মাত্র ৮১ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের পরীক্ষায় একজন অংশ নেন এবং তিনি ফেল করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মোহাম্মদ জাহেদুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে কলেজ দুটির শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
ফলে তারা নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারেননি। রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ চার বছর থাকে, সে হিসেবে আগে অকৃতকার্যরাই বারবার পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ এ অবস্থায় তারা চাইলেও অন্য কোনো কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এর বাইরে অনিয়মিত কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে না করার সুযোগ আমাদের নেই।
মন্তব্য করুন