শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

মেঘনা নদীতে সাত খুন, ছেলের শোকে বাবার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২৮
ছবি-সংগৃহীত

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাতজনের একজন সজীবুল ইসলাম। ছেলের এমন মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেস্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে মারা যান বাবা দাউদ মোল্যা।

ছেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শোকে বাবার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ছেলে সজিবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর কেঁদেই চলেছেন বাবা দাউদ মোল্লা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বজনেরা। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।

পাঁচ বছর ধরে জাহাজের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছিলেন সজিবুল ইসলাম। সম্প্রতি জাহাজের চাকরিতে পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। সে ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। মাঝের এ সময়টায় অলস বসে না থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন তিনি। চাঁদপুরের হাইমচরে দুইদিন আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে যে সাতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তাদের একজন সজিবুল।

সজীবুল ইসলামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। মাস পাঁচেক আগে বিয়ে করেছিলেন সজিবুল।

সজিবুলের মামা আহাদ সর্দার শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে সজিবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।  

তিনি বলেন, আজ ওর বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হবে। পদোন্নতি হলে বেতন বাড়বে, বড় জাহাজে চাকরি হবে—এ কারণে পরীক্ষা দিয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে ধান কাটার কাজ করে গেছে। যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গেছে রেজাল্টের অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে ছোট একটা জাহাজে কাজ করে আসি, তাতে কিছু রোজগার হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।

জাহাজে নিহত ব্যক্তিদের আরেকজন হলেন একই ইউনিয়নের চর যশোবন্তপুর গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে মো. মাজিদুল ইসলাম (১৬)। মাজিদুল ঝামা বরকাতুল উলুম ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাদরাসা বন্ধ থাকায় জাহাজে কাজ নিয়েছিল কিশোর মাজিদুল।

ছেলে সজিবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর কেঁদেই চলেছেন বাবা দাউদ মোল্লা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বজনেরা। কোনো স্বান্তনাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে তিনিও মারা যান।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মহম্মদপুর ও নড়াইল সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ জাহাজে চাকরি করেন। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এমভি সুলতান সানজানা নামের লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় মহম্মদপুর পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চারজন নিহত হন।

সোমবার এমভি আল-বাখেরা নামের ওই জাহাজ থেকে মোট সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে এমভি আল-বাখেরা নামে জাহাজটি নোঙর করা ছিল। সোমবার বেলা তিনটার দিকে নৌ পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মরদেহগুলো জাহাজের কর্মীদের ঘুমানোর কক্ষে কক্ষে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কারও কারও মাথায় গভীর ক্ষত দেখা গেছে। কারও কারও ছিল গলা কাটা। শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত ছিল।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার সজিবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সংবাদ রাতেই জানতে পেরেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।  

মন্তব্য করুন