মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাঙ্গামাটিতে ব্যবসায়ীদের বেহাল দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৩৫
ছবি-সংগৃহীত

পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পর থেকে রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। ফলে টেক্সটাইল মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের বিক্রয়কর্মী এবং মালিকেরা অবসর সময় পার করছেন। অনেক দোকান থেকে বিক্রয়কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। এতে অনেকেই অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

রাঙামাটি শহরের টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে এখানকার পাহাড়িদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত, হাতে তৈরি পোশাক বাইরের পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং বেশি বিক্রিও হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় প্রশাসন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় পর্যটকশূন্য রাঙ্গামাটি।

রাঙ্গামাটির টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙ্গামাটি শহরসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে টেক্সটাইল দোকানগুলোতে প্রায় পাঁচশ’ বিক্রয়কর্মী পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। প্রত্যেক বিক্রয়কর্মীর মাসিক বেতন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায় নাজুক অবস্থার কারণে বিক্রয়কর্মীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক দোকানদার বেতন দিতে না পেরে কর্মী ছাঁটাই করছেন।

রাঙ্গামাটির শহরের তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, টেক্সটাইল মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের বিক্রয়কর্মী এবং মালিকেরা অবসর সময় পার করছেন। টেক্সটাইল মার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, ২০ সেপ্টেম্বর সংঘাতের পর থেকে তাদের ব্যবসা নেই বললেই চলে।

তবলছড়ি টেক্সটাইল মার্কেটে এন আর হ্যান্ডিক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী অনুপম ত্রিপুরা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের ব্যবসা চলে না। পর্যটক না থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিমাসে দোকান ভাড়া, বিদুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়াও বেচাকেনা না থাকায় কর্মীও ছাঁটাই করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, অতিদ্রুত যদি রাঙ্গামাটিতে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারো ভালো হবে।

বেইন টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী নম্রদা চাকমা জানান, এখন পর্যটক খুবই কম। বলতে গেলে একেবারেই নেই। পর্যটক থাকলে বেচাকেনা হয়, না থাকলে হয় না। ফলে আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেট সংলগ্ন জুমবাজারের বিক্রয়কর্মী রেখা চাকমা জানান, রাঙ্গামাটিতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধ থাকায় কোনো বেচাকেনা নেই। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রতিমাসে ২-৩ লাখ টাকা আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে।

রাঙাবী টেক্সটাইলের উইজি মারমা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। এখন আবার সরকারিভাবে পর্যটক আসতে নিরুৎসাহিত করায় বেচা-বিক্রি মোটেও নেই। বিগত তিন মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে।

রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, রাঙ্গামাটির ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটক নির্ভর। পর্যটক সমাগম যদি কম হয়, তাহলে দেখা যায় এর প্রভাব প্রত্যেকটা সেক্টরে পড়ে। এ কয়েকদিনে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ খাতে প্রতিদিন আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে কোটি টাকার কাছাকাছি। এখানকার পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত যেসব পণ্য আছে, সব বিক্রি হয় আগত পর্যটকদের কাছে। পর্যটক না আসার কারণে সবক্ষেত্রে ধস নেমে গেছে।

তিনি আরো জানান, ২০ সেপ্টেম্বরের পর ৮ অক্টোবর থেকে জেলা প্রশাসন পর্যটকদের রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে। প্রশাসনের কাছে তিনি অনুরোধ জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমন এবং এখানকার অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতা ফিরিয়ে আনতে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে রাঙ্গামাটিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতি আপাতত পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাই বন্ধ রাখা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে খুলে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। গত ৬ অক্টোবর এমন তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং জানমালের ক্ষতি এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা প্রশাসন এক জরুরি সভার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা সাজেক ভ্রমণে নিরৎসাহিত করে আসছিল জেলা প্রশাসন। এরপর পুরো জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার নির্দেশনা আসে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে মো. মামুন (৩০)  নামে এক যুবককে পেটানো হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে ঐদিন জেলার দিঘীনালা উপজেলার লারমা স্কোয়ার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঐ ঘটনায় তিনজন নিহত হন।

এ ঘটনার উত্তাপ পরদিন রাঙ্গামাটি শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরে শত শত পাহাড়ি জনতা মিছিল বের করে। সেই মিছিল থেকে বনরূপা এলাকার দোকানপাট ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরে দুপুরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ঘটনায় এক যুবক নিহত হন। আহত হন ৬৩ জন।

এদিকে, ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলায় আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়ি ছাত্র-যুবারা। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ দিন পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

মন্তব্য করুন