চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ পরিবেশনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ।
তিনি বলেন, পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে গান গাওয়া নিয়ে তীব্র আলোচনা তৈরি হয়। সেই গানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা আলোচনায় মাতেন নেটিজেনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক সজল দত্তের আহ্বানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে একটি সংগঠন ওই পূজামণ্ডপে গান করতে যায়। তবে গান গাওয়ার পর সনাতন ধর্মের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
তারা ওই সংগঠনটিকে জামায়াত ইসলাম ও ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করছেন। যদিও চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির আহ্বায়ক সেলিম জামান জানিয়েছেন তাদের সঙ্গে জামায়াত বা ছাত্র শিবিরের কোনো সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয়জন সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠেন। সংগঠনটি শাহ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে।
এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ গানের অল্প অংশের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত গানের দলটিকে পূজামণ্ডপে নিয়ে এসেছে। তার উপস্থিতিতেই মঞ্চে উঠে এসে গান পরিবেশ করেছে। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
সংগঠনটি জামায়াতের কি না এমন প্রশ্নে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানও দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজামণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল দত্ত প্রায় ১০ দিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। আমাদের কয়েকজন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। আজ তিনি ফোন করে বলেন ‘‘আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেবো। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন।’’
সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটা পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি জামায়াত বা ছাত্র শিবিরের কোনো গানের দল কি না- এমন প্রশ্নে সেলিম জামান বলেন, ‘এটি জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন নয়। শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে আমাদের গানের দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।’
তবে এই বিষয়ে সজল দত্তের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে গানের দলটির সঙ্গে জামায়াতকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এই গানের দলের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। গান করার সময় জামায়াতের কেউও অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন না।’
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে পূজা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া নিয়ে ছাত্র শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
মন্তব্য করুন