কক্সবাজারে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে এবং বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলারডুবিতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ট্রলারসহ ৫ শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রলারডুবিতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জেলের। এছাড়া টেকনাফের বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে ইনানী থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক তাদের পরিচয় মেলেনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সৈকতকর্মীদের ইনচার্জ মাহবুব।
তিনি জানান, ইনানী পাটোয়ার টেক বিচের পাশাপাশি জোয়ারের পানির সঙ্গে দুইজনের লাশ ভেসে আসে। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে শহরের সমিতি পাড়া থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইনানী থেকে শুক্রবার বিকালে আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্টের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ২৩ জেলেসহ এফবি রশিদা নামে একটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে জামাল নামের এক জেলে নিহত হন। জীবিত অবস্থায় ১৯ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো তিন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, দুই দিনে ইনানী থেকে তিনজন, কলাতলী থেকে একজন ও সমিতি পাড়া থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই পাঁচজনের লাশ সাগর থেকে ভেসে এসেছে।
সাগরে ট্রলারডুবির কারণে এসব জেলের মৃত্যু হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার কক্সবাজারের সদরের ঝিলংজায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, দক্ষিণ ডিককুলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আখি মনি এবং তার দুই শিশু কন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিমপাড়ায় ক্যাম্পে এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, কক্সবাজার জেলায় দুই দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপকুলে ফিরতে পারেনি কক্সবাজারের ১৩টি ফিশিং ট্রলার। এসব ট্রলারে ৫ শতাধিক মাঝি-মাল্লা রয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি।
নিখোঁজ ট্রলারগুলো হলো- এফবি হাসান, এফবি আবছার, এফবি সাবিত, এফবি মায়ের দোয়া, এফবি কায়সার, এফবি আব্দুল মালেক এক দুই, এফবি আঁখি, এফবি তাহসিন, এফবি বাবুল, এফবি নাছির, এফবি সেলিম, এফবি নজির ও এফবি জনি।
দেলোয়ার হোসেন আরও জানান, গেল বুধবার থেকে টানা বর্ষণ হচ্ছে কক্সবাজার উপকূলে। বৃষ্টি হওয়ায় উপকূলে ফিরছিলেন জেলেরা। অনেক ট্রলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেসে গেছে। তার মধ্যে ৮টি ট্রলার কলাতলী ও উখিয়ার ইনানীর পাটোয়ারটেক পয়েন্টে ভেসে এসেছে। সেখান থেকে তিন শতাধিক জেলে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, কোনো রকম যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ১৩ ফিশিং ট্রলারের সঙ্গে। এসব ট্রলারে থাকা ৫ শতাধিক জেলের ফোনে সংযোগ নেই। সে হিসেবে তারাও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
মন্তব্য করুন