দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিগত দিনেও দেশের উন্নয়ন করেছি, আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করবো। কাজেই ওয়াদা দেন, আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।’
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, এর কারণে এখানে আসা যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।’
যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এজন্য যা যা দরকার আমাদের সরকার কাজ করবে। আমি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই। একইসঙ্গে আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। আপনারা যা চাইবেন, আমি তার চেয়ে বেশি দেবো।’
এর আগে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এসময় রিজার্ভ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি দেখি কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নাই। অনেকে বলে ব্যাংকে টাকা নাই। কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তোলে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু ব্যাংকে টাকা নেই এই কথাটা মিথ্যা।
সরকার প্রধান বলেন, গতকালও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ তাদের সাথে মিটিং করেছি। আমাদের এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নাই। প্রত্যেকটা ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে।
আওয়ামী লীগ প্রধান আরও বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স আসছে, বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। আমদানি-রপ্তানি আয়, ট্যাক্স কালেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশ যেখানে হিমসিম খাচ্ছে, নিজেরা অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। সেখানে বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে আজকে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অর্থনীতিকে এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। যে রিজার্ভ গেল কোথায়? রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে।
বিএনপি রক্ত আর হত্যা ছাড়া দেশকে কিছু দিতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যশোরে শামসুর রহমান, মুকুলকে হত্যা করা হয়েছে। খুলনায় মঞ্জুরুল ইমাম, মানিক শাহ, বালু, সাংবাদিকদের একে একে হত্যা করা হয়েছে। শুধু রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি তো আর কিছু দিতে পারেনি দেশের মানুষকে! নিজেরা লুটপাট করেছে। নিজেরা মানুষের অর্থ পাচার করেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তারা শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
এসময় তিনি আরও বলেন, অপরাধ করেছে বলেই খালেদা জিয়া ও তার সন্তান তারেক এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জিয়া যখন মারা যায়, বললো কিচ্ছু থুয়ে যায়নি। ভাঙা স্যুটকেস, ছেঁড়া গেঞ্জি। সেই ছেঁড়া গেঞ্জি হয়ে গেল ফেঞ্চ শিফন আর ভাঙা বাকশো হয়ে গেল জাদুর বাকশো, যা দিয়ে কোকো তারেক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে আর পাচার করেছে বলেই তারা শাস্তি পেয়েছে।
অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে তারেক জিয়া ধরা খেয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছিল। বারবার এ ধরনের মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আর খালেদা জিয়া জনগণের অর্থ শুধু না, এতিমের অর্থ মেরে, জিয়া অরফানেজের অর্থ মেরে সেও আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত যে দলের নেতা, সে দল জনগণকে কী দেবে বলেন!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজবে কান দেবেন না, বিএনপির কাজই হচ্ছে গুজব ছড়ানো। নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সেবা করার সুযোগ চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পাশে থাকতে হবে। আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই। প্রত্যেকটা জায়গায় দেশ এগিয়ে যাক, সেটিই প্রত্যাশা। যতদিন বেঁচে আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাবো।
মন্তব্য করুন