শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

ঘোড়াঘাটে মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন সুরা মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:০৩

জেলার ঘোড়াঘাটে মুসলিম স্থাপত্যর এক অনন্য নিদর্শন সুরা মসজিদ। প্রাচীনতম এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়েছে।

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ঘোড়াঘাট-হিলি পাকা রাস্তায় পাশে চোরগাছা গ্রামে প্রাচীন স্থাপত্যের ৫০০ বছর আগের এ ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ।  দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের নির্মাণ কারুকার্য এক নজর দেখতে বছরে হেমন্ত ও শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটি আসেন হাজার হাজার দর্শক ও পর্যটক।

স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা শহর থেকে দর্শনার্থীদের সারা বছর জুড়েই থাকে পদচারণা থাকে  এ এলাকায়। সুরা মসজিদ নির্মাণকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। অনেকেই এ মসজিদকে সৌর মসজিদ বলে আখ্যায়িত  করে থাকেন। আবার কেউ বলে সুরা মসজিদ। আবার অনেকের কাছে সম্রাট শাহ সুজা মসজিদ নামে পরিচিত রয়েছে।

আবার মসজিদটির কারুকার্য ও নির্মাণ স্থাপনশৈলী দেখে কেউ ধারণা করেন ১৬ শতকের সুলতানি আমলে হোসেন শাহীর শাসন আমলে এটি নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদকে আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোক চক্ষুর আড়ালে তৈরি হওয়া মসজিদ বলে দাবি করা হয়। আবার প্রবীণ  ব্যক্তিরা বলেন, মোগল সম্রাটের আমলে সে সময় বাংলার সুবেদার শাহ  সুজা এ মসজিদ নির্মাণ করেন। তাই তারা একে শাহ সুজা  মসজিদ নামে ডাকেন। 

তবে এর নির্মাণ ও গঠনশৈলী দেখে ধারণা করা যায়, শাহ সূজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত করা হয়েছে। যেহেতু এ মসজিদটি নির্মাণের কোন শিলালিপি নেই। তাই গঠন শৈলীর  উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য নির্মাণ কাল বের করা হয়েছে। স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণ কালের  কলা কৌশল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে  ধারণা করা হয়  সুলতান হোসেন শাহের আমলের  নির্দশনা এটি।

বড় মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর দক্ষিণ ৪০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিম ২৬ ফুট। ৪ ফুট উঁচু মজবুত প্লাটফরমের উপর মসজিদের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর প্রধান কক্ষের  আয়তন ভেতরে ১৬ দশমিক ১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সঙ্গে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। পুরো মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য খোপকাটা মৌলক টেরাকোটার অলংকরণ, যা এর ইমারতের বাহিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুলতানি আমলের বিরল স্থাপত্য সুরা মসজিদ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত, নামাজের কক্ষ ও বারান্দা। মসজিদের উপরে বর্গকার ও গম্বুজ বিশিষ্ট নামাজ কক্ষ এবং ছোট ৩ টি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। নামাজের কক্ষ ৭ দশমিক ৮৪ মিটার বাই, ৭ দশমিক ৮৪ মিটার। বারান্দার মাপ ৪ দশমিক ৮৪ মিটার লম্বা ও ২ দশমিক  ১২ মিটার চওড়া। চুন সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দিয়ে নির্মিত মসজিদে দেওয়াল ১ দশমিক ৮০ মিটার  প্রশস্ত। নামাজ কক্ষের ৪ কোনে ৪টি ও বারান্দায় দুটি  কালো পাথরের মিনার রয়েছে। 

মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে ৩ টি ও উত্তর দক্ষিণ দিকে একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে কেবলা দেয়ালে ৩টি সুন্দর ভাবে অলংকৃত পাথরের তৈরি অবতল মেহরাব রয়েছে। মসজিদে ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহার দেওয়ালের মাঝে পাথর স্তম্ভ ইটের গাঁথুনি চোখে  লাগার মতো। 

এছাড়া প্রত্যেক দরজার নিচে চৌকাঠ রয়েছে। সেগুলো পাথরের তৈরি। পূর্ব পাশে মসজিদে প্রবেশের সিঁড়ি  রয়েছে। এখানকার কালো বেলে পাথর বাংলার পশ্চিম পান্তে অবস্থিত রাজমহল থেকে আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। অনেকে আসেন এখানে মানত করা গরু খাসি জবাই করে রান্না করে আশ-পাশের লোকজনকে খাওয়ানোর জন্য।

সংস্কার কাজ করে মসজিদে সৌন্দর্য বাড়াতে পারলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়াতে পরে বললে স্থানীয়রা মনে করেন।

মসজিদের ইমাম মো. ইনামুল হক বলেন,  তিনি এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। দিনাজপুর জেলার প্রাচীন এ স্থাপত্য সাক্ষী এ মসজিদটির প্রায় পাঁচশত বছর আগে নির্মিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনাথীরা মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। দর্শনার্থীরা কেউ নামাজের জন্য, আবার কেউ মানত করে আসেন।

সুরা মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব সেকেন্দার আলী  জানান, এটা দিনাজপুর জেলার এটি ঐতিহাসিক মসজিদ। গত ২ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। এ ঐতিহাসিক মসজিদ সংরক্ষণের জন্য, মসজিদ এলাকায় একটি বাউন্ডারি ওয়াল ও বড় গেট করলে স্থানটির নিরাপত্তা বাড়বে। স্থানটি দেখতে আরো ভালো লাগবে সৌন্দর্য বাড়বে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এ ঐতিহাসিক নিদর্শন মসজিদটি মূল অবকাঠামো  ঠিক রেখে  যুগোপযোগী সংস্কার করে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ধরে রাখতে।

তিনি বলেন, বছরের হেমন্ত ও শীতকালে এ ঐতিহাসিক নিদর্শন সুরা মসজিদ দেখার জন্য দেশ-বিদেশ ও দূর-দূরান্ত  থেকে দর্শক এবং পর্যটকদের আগমন বেশি হয়। পর্যটক ও আগন্ত ব্যক্তিরা এ মসজিদটি দর্শন করেন। তারা অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন, এ ঐতিহাসিক নিদর্শন পুরা মসজিদটির মূল অবকাটামো ঠিক রেখে বাউন্ডারী ওয়ালসহ দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য স্থান নির্মাণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারলে পর্যটকদের আরো আকর্ষণ বাড়ানো সম্ভব হবে।

ঘোড়াঘাট ৪ নং ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান ভুট্টু বলেন, এ ঐতিহাসিক নিদর্শন সুরা মসজিদটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রতিদিন বহিরাগত লোকজনের আগমনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লিদের সংখ্যা ব্যাপক হয়। কিন্তু মসজিদের আকার অনুযায়ী ভেতরে মুসল্লিদের নামাজের জন্য স্থান পায় না। ফলে মুসল্লিদের বাইরে খোলা স্থানে জামায়াত আদায় করতে হয়। এ বিবেচনায় মসজিদের বাইরে সুন্দর্য বৃদ্ধি করে পরিসর বৃদ্ধি করা যায় কিনা? বিষয়টি নিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলামের  সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলামকে এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটি পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন