বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যেভাবে টিকে আছে হস্তচালিত তাঁতশিল্প

প্রবাহ বাংলা নিউজ
  ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭
ছবি-সংগৃহীত

হস্তচালিত তাঁত নিয়ে গবেষণায় সুজিত দাস পরিচিত নাম। এর আগে এই বিষয়ে তার লেখা ইংরেজি বইটি বহুলপঠিত; গবেষকমহলে সমাদৃতও বটে। তার জীবনব্যাপী গবেষণার মূল্যবান নির্যাস এই বাংলা বইটিতেও রয়েছে। হ্যান্ডলুম বা হস্তচালিত তাঁতশিল্প এক দোলাচল নিয়ে চলেছে বহু যুগ ধরে। 

বেশির ভাগ দেশেই হস্তচালিত তাঁতশিল্প উঠে গেছে, পাওয়ারলুম ও মিল আসার পরে। সেখানে ভারতে এখনও তা টিকে আছে, এ বিস্ময়েরই বটে। কী ভাবে তাঁতিরা ভারতে টিকে গেলেন, তাঁতশিল্পও সমস্ত ঝড়ঝাপটা সহ্য করে টিকে রয়েছে, তার সুললিত ব্যাখ্যা এই বইটিতে রয়েছে। 

এমন বাংলা বইয়ের অভাব আছে যা উচ্চমানের গবেষণার সঙ্গে সুখপাঠ্য বই হিসেবে আমজনতার পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম। এই বইটি সেই দাবি অনেকটা পূরণ করে। হ্যান্ডলুম বা হস্তচালিত তাঁত নিয়ে উৎসাহ আছে এমন যে কোনও পেশা বা বিষয়ের মানুষ বইটি পড়ে হ্যান্ডলুম নিয়ে সামগ্রিক ধারণা পাবেন।

বইটিতে হ্যান্ডলুমের ইতিহাস নিয়ে অনেকটা পরিসরে আলোচনা করা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাস ও অন্যান্য শাখার মানুষের কাছে এই অংশটি বিশেষ সমাদর পাবে। আবার বইয়ে মসলিন, টাঙ্গাইল, বালুচরি এই সব শাড়ি ধরে ধরে বিশদ অধ্যায় রয়েছে। ফলে সাহিত্যের লোকেদের কাছেও এই অংশগুলি সমাদৃত হতে পারে। তাঁতিদের লোকসংস্কার, বারব্রত নিয়ে লেখা অধ্যায়টি সমাজতত্ত্ব বা সাহিত্যের মানুষদের জন্যে এক মূল্যবান উপহার হয়ে উঠতে পারে।

আজকের প্রযুক্তিসর্বস্ব যুগে ছোট ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁরা কী ভাবে বড় ব্যবসার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন, অথবা তাঁরা নিজেদের দখলে থাকা বাজার কী ভাবে ধরে রাখবেন। সরকার কি এ ক্ষেত্রে কিছু করতে পারে? কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও বা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান কি কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারে? এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। 

তাঁতশিল্প ও প্রযুক্তির বিষয়টি নিয়ে বইটিতে জরুরি আলোচনা রয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে লেখক দেখিয়েছেন, কী ভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁতিদের মধ্যে এক ধরনের শ্লথতা বা অনীহা দেখা যায়। এর কুপ্রভাব পরে উৎপাদনশীলতায়। লেখক ফ্লাই শাটলের ব্যবহার নিয়ে সুন্দর আলোচনায় দেখিয়েছেন যে, ইতিহাসে প্রমাণ আছে কী ভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা তাঁতিদের ক্ষতি করেছে। 

লেখক এও দেখিয়েছেন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনেক দেরিতে হলেও কী ভাবে তাঁতিরা উৎপাদন বাড়াতে পেরেছেন। ফ্লাই শাটলের যুগ পেরিয়ে এসে, আজ এআই-এর যুগ, প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে অতি দ্রুত। তাই আজকের যুগে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে অনীহা বা সদিচ্ছার অভাব থাকলে ক্ষতিও হতে পারে ব্যাপক। তাঁতিদের বাজার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সে ক্ষেত্রে।

আর একটি বিষয় তাঁতশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ— প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা। এই বিষয়েও তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা পাওয়া যাবে এই বইয়ে। কী ভাবে তাঁতশিল্পে সমবায় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, কী ভাবে বিপণনের জন্যে তন্তুজ, তন্তুশ্রী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে ওঠে— মূলত সমবায়গুলিকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে এ ধরনের উদ্যোগ যারপরনাই সফল হলেও নব্বইয়ের দশক থেকে নানা সমস্যা দেখা যায়। ফলস্বরূপ এই সংস্থাগুলি ধুঁকতে থাকে। এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক উত্থান-পতনের বিষয়গুলি সুন্দর ভাবে আলোচনায় এসেছে।

মূল্যবান আলোচনা রয়েছে নারীশ্রম নিয়েও। তাঁতশিল্পে নারী-শ্রমিকদের বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁতি বাড়ির মেয়ে-বৌরা যদি কাজে হাত না লাগান, যদি তাঁতিকে সাহায্য না করেন, তা হলে তাঁদের পক্ষে একা পুরো কাজটা করা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি আজকের দিনে বিশেষ জরুরি, কারণ নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সস্তায় বা বিনামূল্যে পেতে থাকা পারিবারিক নারীশ্রমের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এর প্রভাব অনেক শিল্পের মতোই পড়েছে তাঁতশিল্পেও।

কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। কোভিড অতিমারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁতশিল্প কী ভাবে টিকে থাকতে বা উন্নতি করতে পারে, সেটি চিন্তার বিষয়। লেখক এই আলোচনা খানিকটা ছুঁয়ে গেছেন, তবে আরও দীর্ঘ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। করোনা-পরবর্তী কালে তিনি যে বিভিন্ন তাঁতশিল্প কেন্দ্রে গিয়েছিলেন, সেই আলোচনা আর একটু বিস্তৃত হতে পারত।

কিছু অধ্যায়ে (যেমন, ষষ্ঠ) সূত্রনির্দেশের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম। এ ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র তিনি ব্যবহার করেননি, ভাল জার্নালে প্রকাশিত আরও কিছু গবেষণাপত্র ব্যবহার করা যেত। বইয়ে উপসংহার হিসেবে একটি অধ্যায় থাকলে, সেখানে মূল বক্তব্যগুলি নথিবদ্ধ করা গেলে বইটি পরিপূর্ণ হত।

মন্তব্য করুন