কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বলেছেন, ‘ছেলেমেয়েদের বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে শেখাতে হবে। আজকের দিনে আমাদের ঘুরে দেখতে হবে, বাংলা ভাষা কি অবস্থায় রয়েছে। তার গায়ে কোনও রোগের চিহ্ন আছে কি না। তার জন্য আমরা দায়ী কি না। বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজির প্রবণতা বাড়লে মাতৃভাষার প্রতি পরের প্রজন্মের উপেক্ষা বেড়ে যাবে।’
কলকাতার বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভাঘরে অমর একুশে সাহিত্য উৎসবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভাষা শহীদদের স্মরণে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, পুবের কলমের সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. সাইফুল্লাহ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোস্তাক আহমেদ, অধ্যাপক ড. শেখ কামাল উদ্দীন, ভাষা চেতনা সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক, অধ্যাপক ড. মুহ. কুতুবুদ্দীন মোল্লা, অধ্যাপক ড. তৌসিফ আহমেদ, অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন, অধ্যাপক আবু রাইহান, অধ্যাপক শিরিন সুলতানা, চিত্র শিল্পী গৌতম চৌধুরী, চিত্র নির্মাতা মুজিবুর রহমান, সৌদি আরব প্রবাসী ডা. সমীর দত্ত প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ওমর আলী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক ও শেকড়কথা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক কবি সাহানারা খাতুন।
অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা সাহিত্য চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি ডা. কাউসারী মালেক রোজীকে অমর একুশে সাহিত্য সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া কলকাতার ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ড. স্বাতি গুহকে কমলা ভট্টাচার্য স্মৃতি সম্মাননা দেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
শুরুতে প্রদীপ প্রজ্বলন করে বর্ণমালা প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি ডা. কাউসারী মালেক রোজীর কবিতার বই ‘ভিক্ষুকের মুখ’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন পুবের কলম সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান।
অমর একুশে সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর নাদিম ইকবাল পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র ‘ড. নূরুন নবী, আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’র ৩৩তম প্রদর্শনী করা হয়।
প্রদর্শনী শেষে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া অজানা অনেক তথ্য এই প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের অবদানের কথা আমাদের নতুন প্রজন্মের জানা দরকার।
বক্তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পরেও প্রবাস থেকে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, চমৎকারভাবে তা তুলে ধরা হয়েছে। এই তথ্যচিত্রের নির্মাতা ও কুশলীদের সাহসী পদক্ষেপের জন্য বক্তারা ধন্যবাদ জানান।
এর আগে বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিভিন্ন এলাকায় ৩২টি প্রদর্শনী হয়। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে একুশের গান ও দেশের গান পরিবেশন করেন। বায়ান্ন থেকে একাত্তর নিয়ে সাজানো হয় পুরো অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন